মেজর ডালিমের জীবনী এবং তার বই

মেজর ডালিমের জীবনী এবং তার বই

মেজর ডালিম: জীবনী, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক প্রভাব

মেজর শরিফুল হক ডালিম, যিনি সংক্ষেপে মেজর ডালিম নামে পরিচিত, বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাস এবং রাজনীতিতে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার জীবন, কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি জটিল অধ্যায়। এই নিবন্ধে মেজর ডালিমের জীবন, তার সামরিক ক্যারিয়ার, ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা, এবং পরবর্তী জীবনের নানা দিক বিশ্লেষণ করা হবে।

প্রারম্ভিক জীবন

মেজর শরিফুল হক ডালিম ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম ও শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে। তিনি শিক্ষাজীবনে মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের একটি বড় মোড় হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সামরিক ক্যারিয়ার ও মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর ডালিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার এই অবদান তাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। স্বাধীনতার পর তিনি নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৭৫ সালের আগস্ট: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। মেজর ডালিম এই হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছিলেন সেই সামরিক কর্মকর্তাদের অন্যতম, যারা এই অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমিতে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের উত্থান ঘটে এবং দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার সূচনা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরে মেজর ডালিম এবং তার সহকর্মীরা সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হন। তবে এ ঘটনাকে ঘিরে তার বিরুদ্ধে বহু সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে। “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড” ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায়গুলোর একটি, এবং এতে তার ভূমিকা নিয়ে আজও নানা আলোচনা হয়।

পরবর্তী জীবন ও প্রবাস

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মেজর ডালিম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে প্রবাসে ছিলেন। তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা চলেছে। তিনি পাকিস্তান, লিবিয়া, এবং পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করেন। প্রবাস জীবনে তিনি নিজেকে রাজনীতিতে জড়িত রাখার চেষ্টা করেন এবং বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে প্রভাব বিস্তার করেন।

প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে মেজর ডালিম তার জীবনের ঘটনা ও ইতিহাস নিয়ে “১৫ আগস্ট: একটি ইতিহাস” শীর্ষক একটি বই রচনা করেন। বইটি তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে। তবে তার লেখা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ অনেকেই মনে করেন এতে ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সমালোচনা ও বিতর্ক

মেজর ডালিমের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় সমালোচনার মুখে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা প্রশংসিত হলেও ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা তাকে বাংলাদেশের জনগণের বড় একটি অংশের কাছে বিতর্কিত করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে সরাসরি দায়ী করা হলেও তিনি কখনো এই বিষয়ে খোলাসা করে দায় স্বীকার করেননি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার পুনরায় শুরু হয়। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় দোষীদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, তবে মেজর ডালিমসহ কয়েকজন অভিযুক্ত তখনও বিদেশে পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনও বহাল রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রভাব

মেজর ডালিমের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী সামরিক শাসন দেশকে গণতন্ত্র থেকে সামরিক স্বৈরশাসনের পথে ঠেলে দেয়। এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং জাতীয় জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে।

সামরিক ক্যারিয়ার এবং মুক্তিযুদ্ধ

  • পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান।
  • মুক্তিযুদ্ধ এবং তার অবদান।
  • বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি।

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে মেজর ডালিমের ভূমিকা।
  • তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক।

পরবর্তী জীবন ও প্রবাস জীবন

  • হত্যাকাণ্ডের পরে তার জীবনের পরিবর্তন।
  • প্রবাসে অবস্থান এবং তার রাজনৈতিক মতাদর্শ।

মেজর ডালিমের স্মৃতিচারণ ও আত্মজীবনী

  • তার লেখা বই “১৫ আগস্ট: একটি ইতিহাস” এর মূল বিষয়বস্তু।
  • ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিতর্ক।

সমালোচনা এবং বিতর্ক

  • তার কাজের প্রশংসা ও সমালোচনা।
  • বিচার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।

উপসংহার

মেজর শরিফুল হক ডালিমের জীবন এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে একটি জটিল এবং বিতর্কিত অধ্যায়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অবদান তাকে একজন নায়কে পরিণত করলেও, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা তাকে চিরস্থায়ী বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তার জীবন এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং বিশ্লেষণের বিষয়।

আমি মেজর ডালিম বলছি বইটি নিচে পিডিএফ আকারে দেওয়া হলো:-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Up