জিয়াউর রহমানের জীবনী

জিয়াউর রহমানের জীবনী

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। তাঁর আমলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তিত হয়, বিশেষ করে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারী দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করেন এবং দেশের স্বাধীনতার পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নেন।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংকট সৃষ্টি করে।

জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক জীবন, তাঁর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এবং মৃত্যুর পর তাঁর অবদান নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ রয়েছে।

প্রারম্ভিক জীবন:

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল চরিত্র হিসেবে যে ব্যক্তির নাম অম্লান হয়ে থাকবে, তিনি হলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বরিশাল জেলার বেতাগী উপজেলার একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম মাওলানা আব্দুর রশিদ এবং মায়ের নাম মিসেস সেলিনা রহমান। তাঁর পরিবার ছিল গড়পরতা মধ্যবিত্ত, কিন্তু তাঁদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। ছোটবেলায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন জিয়াউর রহমান।

পরে তিনি বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা শেষে তিনি কুচবিহার (ভারত) থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার জন্য প্রবেশপত্র পান। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান আর্মি একাডেমি (কাকুল) থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। সেখানে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

জিয়াউর রহমান: বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নায়কের উত্থান ও পতন
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনাবলি দেশের রাজনীতিতে গভীর পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন জিয়াউর রহমান, যিনি বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবন, কর্ম এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

প্রারম্ভিক জীবন ও সেনা ক্যারিয়ার
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বরিশাল জেলার বেতাগী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মাওলানা আব্দুর রশীদ। তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন স্থানীয় স্কুল থেকে এবং পরে ভারতের কুচবিহার থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

১৯৫৩ সালে পাকিস্তান আর্মি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে, মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ভূমিকা একেবারে আলাদা ছিল।

তিনি ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর অগণিত বাংলাদেশি জনগণের ওপর হামলার পর, ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সময়, পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বন্দি হওয়ার আগেই রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

মুক্তিযুদ্ধে পরবর্তীতে, তিনি মুজিবনগর সরকারের অধীনে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। তবে, মুক্তিযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক প্রভাব ও ভূমিকা ব্যাপকভাবে বাড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট: জিয়াউর রহমানের উত্থান
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে নেতৃত্বের ফাঁক সৃষ্টি হলে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের প্রধান সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কিছুদিন পর রাষ্ট্রপতির পদেও আসীন হন। তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বিশেষভাবে সমাজের উজ্জীবিত অংশকে সম্পৃক্ত করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমানের কর্মসূচি
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, দেশ পরিচালনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর আমলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে।

১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: তিনি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করতে চাইতেন। অনেক সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাঁর একাংশ মনোভাব ছিল আপাতভাবে শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. ইকোনোমিক রিফর্ম: জিয়াউর রহমানের আমলে অর্থনীতির পুনর্গঠনেও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কৃষিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিনি কৃষকদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি শিল্প-কারখানা এবং অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আসেন।

৩. বিদেশনীতি: জিয়াউর রহমান তাঁর দেশের বিদেশনীতি আরও কৌশলীভাবে পরিচালনা করেন। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরতে চান। তাঁর আমলে ভারতের সাথে সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত ছিল, তবে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেন।

৪. সামরিক শক্তি: সেনাবাহিনীকে তিনি আরও শক্তিশালী করতে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনায় ছিল বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং তাদের প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধি করা। তবে, তাঁর সময়ে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে মিশে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল।

১৯৮১ সালের হত্যাকাণ্ড
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়। তাঁর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায় হয়ে থাকে। অনেকের মতে, এটি ছিল ক্ষমতার দখলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষের ফলস্বরূপ।

জিয়াউর রহমানের Legacy (ঐতিহ্য)
জিয়াউর রহমানের অবদান নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্ক রয়েই গেছে। একদিকে তাঁকে স্মরণ করা হয় দেশকে একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন দেয়ার জন্য, অন্যদিকে তাঁর সময়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁর শাসনকে কিছুটা বিতর্কিতও মনে করা হয়। তবে, তাঁর মৃত্যুর পরও বিএনপি, যা তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল, দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং তাঁর অনুসারীরা তাঁর শাসনকালকে একটি শক্তিশালী শাসন হিসেবেই মনে করেন।

তাঁর কর্মসূচি, নীতি ও পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে।

সেনাবাহিনীতে ক্যারিয়ার:

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর জিয়াউর রহমান অনেক দ্রুত উন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ কৌশল এবং সাহসিকতার জন্য তিনি প্রশংসিত হন। সেই সময় তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর, তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং জিয়াউর রহমান:

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী গঠিত হলে, জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং নারকীয় আক্রমণের পর, তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং ২৬ মার্চ ঢাকার রেডিও স্টেশন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম দিকে, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর অধীনে সিলেট অঞ্চলে সেনা অফিসার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার আগেই, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁর সেই অবদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, জিয়াউর রহমান মুজিবনগর সরকারের অধীনে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করেন। মুজিবনগর সরকারের অধীনে তিনি মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন সফল অপারেশনে অংশ নেন এবং সশস্ত্র যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। যুদ্ধের শেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫: জিয়াউর রহমানের উত্থান:

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর বাংলাদেশে এক বড় শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এ সময়ে, জিয়াউর রহমান, যিনি তখন সেনাপ্রধান ছিলেন, তিনি কার্যত দেশের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের প্রধান শাসক হয়ে ওঠেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান:

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তাঁর শাসনামল রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দিক থেকে বিতর্কিত হলেও কিছু দিক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

১. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা:
১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি বর্তমানে দেশটির অন্যতম প্রধান দল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামরিক শক্তি বৃদ্ধি:
জিয়াউর রহমান দেশের সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে চেষ্টা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধি করা হয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
তিনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কৃষি ও শিল্পখাতে প্রণোদনা প্রদান করা হয়, এবং ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

বিদেশনীতি:
জিয়াউর রহমান তাঁর বিদেশনীতি আরো গতিশীল করতে চান। ভারতের সাথে সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত ছিল, তবে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী বানানোর চেষ্টা করেছিলেন।

১৯৮১ সালে হত্যাকাণ্ড:

১৯৮১ সালের ৩০ মে, সেনাবাহিনীর একাংশের মাধ্যমে একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যার ফলে জিয়াউর রহমান নিহত হন। তাঁর হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি শোকাবহ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর মৃত্যুর পর, বিএনপি দলটি তাঁর আদর্শ ও কর্মসূচি অনুসরণ করে এবং তার শাসনকালকে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকার:

জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তার প্রতিষ্ঠিত দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিএনপি) বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম খালেদা জিয়া, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন। বিএনপি আজও বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অব্যাহত রয়েছে এবং জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া রাজনৈতিক ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছে।

উপসংহার:

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার জীবনী বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অম্লান অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠা, এবং দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন—সবক্ষেত্রে তার অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তবে তাঁর শাসনকালে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Up